Stories

দেশি বেগুনের দরদাম

খন্দকার টমেটো সাহেবের সুখের সংসার। স্ত্রী মিসেস পেঁয়াজ কুচি , ছেলে খন্দকার মূলা সুন্দরকে নিয়ে তার কেচাপ-কাসুন্দিময় দিন কাটে।

তবে খন্দকার সাহেবের একটা ছোটখাটো অসুখও আছে , যেটা আপাতত কেউ জানেন না। তিনি কোথা থেকে নাকি শুনেছেন অসুখ জানলে অথবা জানাজানি হলে অসুখ দ্রুত বাড়ে। প্রতিমাসেই চিন্তা করেন ডাক্তার দেখাবেন, কিন্তু হয়ে ওঠে না এদিক ওদিক টাকা ঢালতে যেয়ে। এইতো এই মাসে ছেলেকে নতুন ফোন কিনে দিতে হলো। ইদানিং কয়েক মাস পর পরেই ছেলের ফোনটা ছিনতাই হয়ে যাচ্ছে! রাত জেগে ছেলে কার সাথে যেন কথা বলে, আর মেসেঞ্জারের বিপ বিপ শব্দ হয়, সেটা নিয়েও উনি চিন্তা ভাবনা করেন সময় পেলে।

এভাবেই যখন যাচ্ছিল, হুট করেই বলা নেই কওয়া নেই সমস্যাটা খুবই বেড়ে গেল। যাদের সাথে উঠাবসা করেন তাদের থেকে একটু খোঁজ নিয়ে দেখা করতে গেলেন ডাক্তার বেগুনের সাথে!


বেগুন সাহেবকে নিয়ে আবার আরেক কেচ্ছা! তিনি নাকি কথা বলেন কম, তার নাকি সময় নিয়ে খুব গবেষণা ! টমেটো সাহেব অবশ্য তেমন কিছু পেলেন না খুঁজে। গভীর মনোযোগ দিয়ে টমেটোর সাহেবের রিপোর্ট গুলো দেখে ডাক্তার বেগুন এমন একটা চিকিৎসার কথা বললেন , যেটার নাম পর্যন্ত অনেক চেষ্টা করেও টমেটো সাহেব উচ্চারণ করতে পারলেন না । চিকিৎসা খরচের টাকার অংকটা জিজ্ঞাসা করারও সাহস হলো না! অবশ্য বেগুন সাহেব বলে দিলেন কেমন খরচ হতে পারে‍!


খন্দকার টমেটো সাহেব বাসায় ফিরে অনেক চিন্তা করলেন। এত টাকা তো তার ব্যাংকে নাই। গ্রামের কিছু জমি ছেড়ে দিলে হয়তো যোগাড় সম্ভব।

ঠিক সে সময় বাসায় হাজির হলেন এলাকার খান বাহাদুর আলু চৌধুরী! লোকশ্রুতি আছে এই 'খান বাহাদুর' নামের অংশটা তিনি নিজেই নিজেকে দিয়েছেন! তার সুপারপাওয়ার হচ্ছে তিনি দুঃসময় শুঁকে শুঁকে মানুষের বাসায় হাজির হতে পারেন ।

অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসের সাথে তিনি যে বিভ্রান্তিকর তথ্য গুলো মানুষকে দেন, সেগুলো শুনে মানুষের তাকে অনেক আপন মনে হয়!


এবারও সব শুনে, তিনি টমেটো সাহেবকে ভালোমতো বুঝিয়ে দিলেন যে, এত জমিজমা বিক্রি করে যদি চিকিৎসা করতেই হয়, তবে দেশে না করে বাহিরে যাওয়া ভালো। আশেপাশের দেশের নাকি এ বিষয়ে অনেক নামডাক‍!

পাশাপাশি ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে বুঝিয়ে দিলেন, তার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলতে পারেন, বেগুন সাহেব ডাক্তার হিসেবে অতোটা কাজের নয়! দেশে নাকি সব ডাক্তারই বেগুন সাহেবের মতই! তিনি নিজেই এত বিচক্ষণ একজন, অথচ তিনিও নাকি বেগুন সাহেবকে দেখিয়ে ধরা খেয়েছেন!


জনাব টমেটো সব কিছুই শুনলেন। বাহিরে যাওয়ার প্রস্তুতিও নিয়ে ফেললেন। মানুষ যখন অনেক সময় না খেয়ে থাকে, তাকে যেটাই দেয়া হয় সেটাই অমৃত লাগে। এতদুর পথ বাসে-ট্রেনে-প্লেনে-ট্যাক্সিতে করে টমেটো সাহেব যখন নাম-শোনা বিদেশি হাসপাতালটায় গিয়ে পৌঁছলেন, ওখানে উনাদের কথাবার্তা তাকে প্রায় মুগ্ধ করে দিল! এত পথ অতিক্রম করে এসে, কারো মন সায় দেয় না সে খারাপ কিছু পাবে প্রতিদানে। যেটুকুনি পায়, ভালো মনে মেনে নেয়। দিন শেষে যখন চিকিৎসার পর বুঝলেন এই চিকিৎসাটার কথা ডাক্তার বেগুন সাহেবও বলেছিলেন , তখন তার মনে মনে ভালই লাগলো। তাহলে সঠিক চিকিৎসাই হয়েছে বটে! কিন্তু একটু পরেই মাথায় চিন্তা চেপে বসল এবার দেশে ফিরবেন কি করে ভেবে। টাকা যা নিয়ে এসেছিলেন প্রায় শেষের দিকে!


কোনভাবে যখন দেশে ফিরলেন, রিক্সা ভাড়া টা বাসায় মিসেস পেঁয়াজের থেকে নিয়েই দিতে হলো। পকেট ততক্ষণে যে শুন্য!


তিনি যখন ভাড়া দিচ্ছিলেন ,ঠিক সেই সময় ডাক্তার বেগুন মাত্র একটা অপারেশন করে বের হয়েছেন, একটু দূরে দেখলেন রোগীর আত্মীয় স্বজনরা বাহিরে তুমুল ঝগড়া লাগিয়ে দিয়েছেন নিজেদের মধ্যে অপারেশনের খরচ এখনো পুরোটা ম্যানেজ হয়নি বলে।


ডাক্তার সাহেব তার জুনিয়রকে ডেকে বললেন, আমার খরচটা নিতে মানা করো কাউন্টারে, শুধু পারলে ওষুধের খরচটা নেয়া যায় কিনা দেখো। যদি সেটা কঠিন হয়ে যায় তাহলে আমাদের কোনো ফান্ড থেকে পূরণ করে দিও।


আমাদের এমন কিছু বেগুন সাহেবদের কথা শোনা রয়েছে। আমরা তাদের সবাইকে খুঁজে পাচ্ছি না। উনারা জনাব টমেটোদের ভিড়ে হারিয়ে গেছেন। আপনার কাছে এমন কারও সন্ধান থাকলে জানাতে ভুলবেন না আমাদের।

শোনা যাচ্ছে সামনে ভাল টমেটোর গুণাগুণ নিয়ে টমেটো সাহেব আপনাদের কিছু কথা বলতে চান। ততদিন ভালো থাকুন, বাসায় থাকুন, নীরোগ থাকুন এই শুভ কামনায়।


আপনার জীবনের আলু,,বেগুন,টমেটো সহ আরোও যত মজার শাকসব্জি পরিচিত আছেন তাদের কথা আমাদের জানাতে ভুলবেন না এখানে https://forms.gle/NEnCK4xcagWjJyDd7


[লিখে জানানোর পাশাপাশি চাইলে পাঠাতে পারেন রেকর্ডিং অথবা ইতিমধ্যে কোনোও লেখা পোস্টের লিংক! একেএকে তাদের কথাও আমরা সবাইকে জানাতে চাই এখানে।

এত দুশ্চিন্তা করে কী করি?

খন্দকার টমেটো সাহেব লকডাউনের তরকারিতে পড়ে আছেন গত মার্চ থেকে। দুইদিন পর পর ভ্যাক্সিনের কোন উপায় হল কিনা তা নিয়ে কথা বলবেন ভাবেন ডাক্তার বেগুনের সাথে। আসলেই কি ভ্যাক্সিনের আশা আছে? নাকি টমেটো সাহেবকে এই শীতে ঘরে বসেই নতুন শেকড় ছড়িয়ে গাছ হয়ে যেতে হবে?


টমেটো সাহেব এর মতো উনার প্রতিবেশী আলু চৌধুরী, পেঁয়াজ আলী, আদা জাহাজীর আছেন অনেকটা সংশয়ে। একেক নিউজ একেক কথা বলে, একজন বলে ভ্যাক্সিন কাজ করবে আবার আরেকজন বলে ভ্যাক্সিন আবিষ্কার করা সম্ভবই না, আবার আরেকজন বলে ভ্যাক্সিন পুরোপুরি কাজ করবে না।

আপনাদের কি মনে হয়? আদৌ কি ভ্যাক্সিন আবিষ্কার সম্ভব? নাকি টমেটো সাহেবের মত আমাদের সবাইকে গাছ হয়ে যেতে হবে?


ডাক্তার বেগুন অবশ্য এত ঘুরপাকে পড়েননি। তার কথা হলো বেশি বেশি জার্নাল ,আর্টিকেল, গাইডলাইন পড়তে হবে। শিখতে হবে, মানতে হবে। তাছাড়া বৃথা চিন্তা করে কোনো লাভ নেই।

আপনাদেরও কি এমন ধারণা? আমাদের জানান তো দেখি!


ডাক্তার বেগুন সাহেবও দুটো খবর আমাদের দিয়েছেন পড়ার জন্য। কমেন্ট বক্সে দিয়ে দিচ্ছি। আর বলেছেন কেউ জার্নাল গাইডলাইন জানতে চাইলে যেন আমাদের বলেন উনাকে জানাতে।


Can doctors be the serial killer?

Who knows! List of trained healthcare professionals who have taken it upon themselves to kill their patients are not too short! Let's meet one of them today. Don't be like him!